উপজেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর
উপজেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর |
উপজেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, উপজেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যা জান লেখ।
- অথবা, উপজেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো উপজেলা পরিষদ। ১৯৮২ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়।
একজন চেয়ারম্যান, দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান, অধিভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃপ ও তিনজন মহিলা সদস্য নিয়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত।
উপজেলা পরিষদের প্রধান কাজ হলো ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমের সমন্বয়সাধন করা। ২০০৯ উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যগণ পরিষদের পরামর্শকের ভূমিকা পালন করেন। এ পরিষদের কার্যকাল ৫ বছর।
উপজেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা : নিম্নে উপজেলা পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. পরিষদের সম্পত্তি অর্জন, দখলে রাখার ও নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা: উপজেলা পরিষদের সম্পত্তি অর্জনের, দখলে রাখার ও নিষ্পত্তি করার এবং চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা থাকবে; তবে, স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা নিষ্পত্তির সকল ক্ষেত্রে পরিষদকে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
২. পরিষদকে সম্পদ হস্তান্তর : সরকার কোনো উপজেলা পরিষদকে এর স্থানীয় অধিক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত কোনো সরকারি সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট আইন বা বিধি-বিধান অনুযায়ী হস্তান্তর করে দিতে পারবে এবং ঐরূপ সম্পত্তি উক্ত পরিষদে বর্তাবে। ও এর নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকবে।
৩. আয়ের উৎস : উপজেলা পরিষদের আয়ের উৎসগুলো হলো উপজেলার আওতাভুক্ত এলাকায় অবস্থিত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হাটবাজার, হস্তান্তরিত জলমহাল ও ফেরিঘাট হতে ইজারার আয়।
যে সকল উপজেলায় পৌরসভা গঠিত হয়নি, সেখানে সীমানা নির্ধারণপূর্বক উক্ত সীমানা বা থানা সদরের মধ্যে অবস্থিত ব্যবসা বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার ওপর ধার্যকৃত কর। পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত সেবার ওপর ধার্যকৃত ফি ইত্যাদি।
৪. পরিষদের ব্যয় : তহবিলের অর্থ নিম্নলিখিত খাতসমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যয় করা যাবে, যথা :
• পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা প্রদান;
• এ অধ্যাদেশের অধীন তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয়;
• এ অধ্যাদেশ বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোনো আইন বা অধ্যাদেশ দ্বারা ন্যস্ত পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদন ও কর্তব্য পালনের জন্য বায়;
• নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনক্রমে পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয়;
• সরকার কর্তৃক পরিষদের ওপর ঘোষিত দায়যুক্ত ব্যয়।
৫. তহবিল সংরক্ষণ বা বিনিয়োগ এবং বিশেষ তহবিল গঠন : পরিষদের তহবিলে জমাকৃত অর্থ কোনো সরকারি ট্রেজারিতে বা সরকারি ট্রেজারির কার্য পরিচালনাকারী কোনো ব্যাংকে বা সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রাখতে হবে।
পরিষদ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তহবিলের যেকোনো অংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। পরিষন, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে পৃথক তহবিল গঠন করতে পারবে, যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে।
৬. দায়যুক্ত ব্যয় তহবিলের ওপর দায়যুক্ত বায় নিম্নরূপ : পরিষদের চাকরিতে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে (প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত কিংবা নিজস্ব) বেতন ও ভাতা হিসেবে প্রদেয় অর্থ;
• সরকার কর্তৃক নির্দেশিত পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা, হিসাব নিরীক্ষা বা অন্য কোনো বিষয়ের জন্য পরিষদ কর্তৃক প্রদেয় অর্থ;
• কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পরিষদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত কোনো রায়, ডিক্রি বা রোয়েদাদ কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ;
৭. কমিশনের অর্থবিষয়ক সুপারিশ বাস্তবায়ন :
• সরকারের বিভিন্ন উৎস হতে প্রদত্ত কর বা ফি ইত্যাদি প্রদানের হার বৃদ্ধি;
• সরকারি কোষাগার হতে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান;
• পরিষদের আয়ের উৎস ও পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত ব্যবস্থা।
৮. বাজেট প্রণয়ন : প্রত্যেক উপজেলা পরিষদ প্রতি অর্থবছর শুরু হওয়ার অন্তত ষাট দিন পূর্বে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত বৎসরের আয় ও ব্যয়ের বিবরণী সম্বলিত বাজেট প্রণয়ন করে এর অনুলিপি পরিষদের নোটিশ বোর্ডে অন্তত পনের দিনব্যাপী জনসাধারণের অবগতি, মন্তব্য ও পরামর্শের জন্য প্রকাশ্য স্থানে রাখবে।
• বাজেট সম্পর্কে জনগণের মন্তব্য ও পরামর্শ বিবেচনাক্রমে পরিষদ সংশ্লিষ্ট অর্থবছর শুরু হওয়ার ত্রিশ দিন পূর্বে বাজেটটি অনুমোদন করে এর একটি অনুলিপি জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরণ করবে।
• কোনো অর্থবছর শুরু হওয়ার পূর্বে পরিষদ এর বাজেট অনুমোদন করতে না পারলে, জেলা প্রশাসক উক্ত বছরের জন্য একটি আয়ব্যয় বিবরণী প্রস্তুত করে তা প্রত্যয়ন করবে এবং এরূপ প্রত্যয়নকৃত বিবরণী পরিষদের অনুমোদিত বাজেট বলে গণ্য হবে।
• বাজেটের অনুলিপি প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক বাজেটে পদ্ধতিগত কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে পরিষদকে অবহিত করবে এবং অনুরূপ সংশোধিত বাজেটই পরিষদের অনুমোদিত বাজেট বলে গণ্য হবে।
• কোনো অর্থবছর সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে উক্ত অর্থ বৎসরের জন্য যেকোনো সময়, প্রয়োজনে, পরিষদ সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করতে পারবে এবং উক্ত সংশোধিত বাজেটের ক্ষেত্রেও এ ধারার বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।
৯. হিসাব : উপজেলা পরিষদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফরমে সংরক্ষণ করতে হবে।
• প্রতি অর্থবছর শেষে উপজেলা পরিষদ একটি বার্ষিক আয় ও ব্যয়ের হিসাব-বিবরণী প্রস্তুত করবে ও সেটা পরবর্তী অর্থবছরের ষাট দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরণ করবে এবং জেলা প্রশাসক মতামতসহ সমন্বিত প্রতিবেদন নির্ধারিত ছকে সরকারের নিকট প্রেরণ করবে।
১০. নিরীক্ষাসংক্রান্ত বিধি প্রণয়ন : সরকার, সরকারি কমিশনের সাথে পরামর্শক্রমে, নিরীক্ষা বিষয়ক ব্যবস্থাপনার বিধি প্রণয়ন করবে, যাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যথা :
• নিরীক্ষা প্রতিবেদনসংক্রান্ত সময়সীমা;
• হিসাবপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অসংগতি বা অনিয়ম;
• অর্থ বা সম্পত্তির কোনোরূপ ক্ষতি বা অপচয়;
• নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ব্যবস্থা গ্রহণের সময়সীমাসহ অন্যান্য করণীয় বিষয়াবলি;
• অবৈধভাবে অর্থ দানকারী বা অর্থ প্রদান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট সুপারিশ;
• হিসাবপত্রের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা; হিসাবপত্রের বিশেষ নিরীক্ষা
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উপজেলা পরিষদকে কার্যকরী ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার যথাযথ অর্থ ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়ন করতে সফল হয়েছে।
এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায় থেকে সংগৃহীত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে সরকারি সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব।
উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করতে হলে অর্থ ব্যবস্থাপনার সকল নিয়মকানুন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে দেশের অবহেলিত অঞ্চলের উন্নতি সাধনসহ বঞ্চিত জনগণের অগ্রগতির জন্যও অবদান রাখতে পারবে।