উপজেলা পরিষদের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর
উপজেলা পরিষদের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর |
উপজেলা পরিষদের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর
- অথবা, উপজেলা পরিষদের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।
- অথবা, উপজেলা পরিষদ কীভাবে গঠিত হয়? এর ক্ষমতা ও কার্যাবলি উল্লেখ কর ।
উত্তর ভূমিকা : উপজেলা পরিষদ বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি একক শ্রেণিবিন্যাস। জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রথমবারের মতো ১৯৮২ সালে উপজেলা পরিষদ চালু করেন।
উপজেলা পরিষদকে বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের দ্বিতীয় স্তর বলা হয়। উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে ।
উপজেলা পরিষদের গঠন : উপজেলার প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান হন। উপজেলার আওতাধীন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যানগণ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে থাকেন।
ইউনিয়ন/পৌরসভার মোট সদস্যসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ মহিলা আসনের জন্য বরাদ্দ থাকে এবং ইউনিয়ন বা পৌরসভার মহিলা সদস্যগণ নিজেদের মধ্য থেকে এ সদস্য নির্বাচন করেন ।
উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি : একটি উপজেলার প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত স্থানীয় জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত পরিষদ উপজেলা পরিষদ নামে পরিচিত। উপজেলা পরিষদের নানাবিধ ক্ষমতা ও কার্যাবলি রয়েছে।
নিম্নে উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
প্রশাসনিক ক্ষমতা : উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতে সব ক্ষমতা, কার্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার থাকে । একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের মূল দায়িত্ব থাকে সরকার ও প্রশাসন কর্তৃক নির্বাচিত সভাসমিতি আহ্বান করা, সরকারি অফিসার ও কর্মচারীদের তত্ত্বাবধান করা এবং সকল প্রকার আয় ও ব্যয়ের হিসাব রাখা ইত্যাদি।
সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন সরকারি কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সব নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সব কার্যক্রমের তদারকি করবেন এবং সব কাজে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহীর যৌথ দস্তখত থাকবে।
উপজেলা পরিষদের কার্যাবলি : উপজেলা পরিষদ প্রায় সব ধরনের নাগরিক সেবা দিয়ে থাকে। নিম্নে উপজেলা পরিষদের কার্যাবলি বর্ণনা করা হলো :
১. পাঁচসালা ও বিভিন্ন মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা।
২. পরিষদ তহবিল বহির্ভূত ব্যয়সংক্রান্ত বিষয়াদির দেখাশুনা করা।
৩. পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং উক্ত দপ্তরের কাজকর্মসমূহের তত্ত্বাবধান সমন্বয় করা।
৪. পরিষদ কর্তৃক কাজ বাস্তবায়নে বিভিন্ন চুক্তি প্রক্রিয়াকরণ ।
৫. উপজেলার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা।
৬. উপজেলা পরিষদ কর্তৃক সব বাস্তবায়নযোগ্য কাজের পরিকল্পনা এবং মূল্যায়ন অনুমোদন ।
৭. বাস্তবায়িত সব ধরনের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি, পর্যালোচনা, পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
৮. সকল প্রকার কার্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটি গঠন ।
৯. উপজেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজ পর্যালোচনা ।
১০. জনকল্যাণমূলক কার্য সম্পর্কিত সেবা প্রদান ।
১১. ট্যাক্স, রেইটস, টোলস এবং ফিস আরোপের প্রস্তাব ।
১২. প্রশাসন ও সংস্থাপন বিষয়াদি পরিচালনা।
১৩. এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ।
১৪. পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক বনায়নসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ।
১৫. বেসরকারি মহিলা শিশু সমাজকল্যাণ এবং যুব, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সব কার্যক্রমে সহায়তা করা ।
১৬. উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রসারের জন্য সকল প্রকার সহায়তা প্রদান ।
১৭. আন্তঃইউনিয়ন সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণ, মেরামত ও তা রক্ষণাবেক্ষণ করা।
১৮. জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিতকরণ।
১৯. ই-গভর্নেন্স চালু ও উৎসাহিতকরণ।
২০. সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, চোরাচালান, মাদকদ্রব্য ব্যবহার ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
২১. ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয়সাধন ও পরীক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান ।
২২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সব কাজের সমন্বয়সাধন ।
২৩. ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন ও বিকাশের কার্যক্রম গ্রহণ।
২৪. স্যানিটেশন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন।
২৫. সমবায় সমিতি ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান ।
২৬. স্থানীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রভৃতি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রমকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই উপজেলা পরিষদ সৃষ্টি করা হয়।
কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলার অন্তর্গত সদস্যদের বিভিন্ন রকম দ্বন্দ্বের কারণে উপজেলা পরিষদের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১৯ সালের ১৮ জুন পঞ্চমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।