উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর

উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর
উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর

উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর

  • অথবা, উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে যা জান লেখ।
  • অথবা, উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে বহুবিধ দায়িত্ব পালন করেন। 

মাননীয় সংসদ সদস্যের পর তিনি উপজেলার সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মর্যাদাক্রমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অবস্থান উপসচিব পদমর্যাদার সমমান। 

উপজেলা পরিষদের অভিভাবক হিসেবে তিনি উপজেলার সার্বিক বিষয়াবলি পরিচালনা করেন। তিনি যে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী ও কার্যাবলির জন্য দায়িত্বশীল তা স্থানীয় সরকার আইনের ৩৫ নং ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলি : নিম্নোক্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলি স্থানীয় সরকার আইনের ৩৫ ধারায় উল্লেখ করা হয় :

১. এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য সাধন এবং পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকল্পে চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন।

২. এ অধ্যাদেশের অন্যান্য ধারায় বর্ণিত বিষয়সমূহকে খর্ব না করিয়া চেয়ারম্যান নিম্নবর্ণিত দায়িত্বসমূহ পালন করিবেন, যেমন— 

ক. তিনি পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং সভা পরিচালনা করিবেন;

খ. পরিষদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর কার্যক্রম তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করিবেন এবং তাহাদের গোপনীয় প্রতিবেদন প্রস্তুত করিবেন;

গ. সরকার বা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করিবেন;

ঘ. উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যৌথ স্বাক্ষরে পরিষদের সব আয়ব্যয়ের হিসাব পরিচালনা করিবেন;

৫. পরিষদের ব্যয় মিটানো এবং পাওনা আদায়ের জন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ক্ষমতা অর্পণ করিবেন;

চ. এ অধ্যাদেশের অধীন প্রয়োজনীয় সব বিবরণী ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করিবেন;

ছ. এ অধ্যাদেশ বা বিধি দ্বারা আরোপিত অন্যান্য ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালন করিবেন ।

৩. চেয়ারম্যান, পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে, প্রচলিত আইন, অধ্যাদেশ বা বিধিবিধান এর পরিপন্থি নয়, এরূপ জনস্বার্থ বা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য নির্দেশ দিতে পারিবেন এবং এ ধরনের কার্যসম্পাদনের ব্যয়ভার পরিষদ তহবিল হইতে বহনের নির্দেশ দিতে পারিবেন।

৪. উপধারা (৩) অনুযায়ী গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে চেয়ারম্যান পরিষদের পরবর্তী সভায় একটি প্রতিবেদন প্রদান করিবেন এবং উহা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হইতে হইবে।

৫. উপরিউক্ত উপধারাসমূহে বর্ণিত দায়িত্ব ছাড়াও চেয়ারম্যান নিম্নলিখিত ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন। যেমন—

ক. তিনি পরিষদের সভায় পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণ ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণের উপস্থিতি নিশ্চিত করিবেন;

খ. তিনি এই অধ্যাদেশ বা তদধীন প্রণীত বিধির পরিপন্থি এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্থানান্তরিত অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা বা কর্মচারী ব্যতীত পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য কর্মচারীগণকে প্রয়োজনে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া বরখাস্ত করিতে পারিবেন;

তবে শর্ত থাকে যে, পরিষদের পরবর্তী সাধারণ সভায় উত্তরূপ সাময়িক বরখাস্ত অনুমোদিত হইতে হইবে, অন্যথায় উহা কার্যকর হইবে না;

প. তিনি পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সচিব বা অন্য কোনো কর্মচারীর নিকট হইতে পরিষদের প্রশাসনিক বিষয়সংক্রান্ত যেকোনো রেকর্ড বা নথি লিখিতভাবে তলব করিতে এবং এই অধ্যাদেশ বা বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন; তবে তিনি এরূপ কোনো রেকর্ড বা নথি তলব করিতে পারিবেন না, যাহা সম্পূর্ণরূপে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সচিব বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে থাকিবে;

ঘ. তাহার বিবেচনায় পরিষদের কোনো সিদ্ধান্ত এই অধ্যাদেশ বা অন্য কোনো আইন বা বিধি পরিপন্থি হইলে, অথবা উক্তরূপ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হইলে উহা জনস্বাস্থ্য, জনস্বার্থ ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করিবে বলিয়া বিবেচিত হইলে, তিনি তাহা কমিশন ও সরকারের নিকট প্রেরণ করিবেন ।

৬. পরিষদের নির্বাহী বা অন্য কোনো কার্য পরিষদের নামে গৃহীত হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ করা হইবে এবং উহা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রমাণিকৃত হইতে হইবে ।

৭. পরিষদের দৈনন্দিন সেবা প্রদানমূলক দায়িত্ব ত্বরান্বিত করিবার লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের মধ্যে নির্বাহী ক্ষমতা বিভাজনের প্রস্তাব পরিষদের সভায় অনুমোদিত হইবে এবং প্রয়োজনবোধে সময়ে সময়ে উহা সংশোধনের এখতিয়ার পরিষদের থাকিবে । 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উপজেলা প্রশাসন প্রশাসনিক ব্যবস্থার একক শ্রেণিবিন্যাস । তৃণমূল পর্যায়ে সব প্রশাসনিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই উপজেলা পরিষদ সৃষ্টি করা হয়। 

উপজেলার চেয়ারম্যান তথা জনপ্রতিনিধি উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে বহুবিধ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলার অন্তর্গত সদস্যদের বিভিন্ন রকম দ্বন্দ্বের কারণে উপজেলা পরিষদের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। 

তবে উপজেলা প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছা উপজেলা প্রশাসনকে আরও বেশি জনপ্রিয় ও যুগোপযোগী করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url