সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো |
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো
- অথবা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদক্ষেপ বর্ণনা কর ।
- অথবা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধাপ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ একজন নির্বাহীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব। কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য অর্জন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন।
যে নির্বাহী যত অধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন তিনি ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে তত বেশি পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারেন ।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি : প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। তবে এক্ষেত্রে কতিপয় সুনির্দিষ্ট উপায় রয়েছে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সাম্প্রতিককালে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতকগুলো প্রয়োজনীয় পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় । নিম্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সমস্যা চিহ্নিতকরণ : সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত চিহ্নিত করা। এ ব্যাপারে দায়িপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের উচিত সমস্যাকে সঠিক ও সুন্দরভাবে নির্ণয় ও তার সমাধান করা।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো ভুলত্রুটি হলে তা সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও অর্থেরও অপচয় করবে।
সুতরাং বিষয় বা সমস্যা যথাযথভাবে চিহ্নিতকরণ এবং এর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করা একজন প্রশাসক বা নির্বাহীর প্রধান কাজ ।
২. সমস্যার বিশ্লেষণ : সমস্যা বিশ্লেষণের জন্য এর পর্যাপ্ত পটভূমি, তথ্য এবং এর সাথে জড়িত উপায় বের করার উদ্দেশ্যে যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে। সমস্যাটির সুষ্ঠু এবং সঠিক বিশ্লেষণ ব্যবস্থাপককে সমস্যার গুণাবলি ও অন্তর্দৃষ্টি সরবরাহ করবে।
৩. বিকল্প উপায় উদ্ভাবন : সমস্যা সমাধানে বিকল্প উপায় উদ্ভাবন এবং তা অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ঐ সমস্যার বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ ও সন্তোষজনক হয় না।
বিকল্পের কোনো অনুসন্ধান ব্যবস্থাপককে সমস্যাটিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ এবং পরিশেষে সমস্যাটির ত্রুটিপূর্ণ দিকসমূহ নির্দেশ করতে সাহায্য করে।
বিকল্প উদ্ভাবন প্রায় ক্ষেত্রেই পছন্দের অবকাশ ঘটায় এবং একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক অসংখ্য বিকল্পের মধ্যে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে এড়িয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গ্রহণ করতে পারেন।
৪. বিকল্প উপায় বাছাইকরণ : কতিপয় বিকল্পের মধ্য হতে শ্রেষ্ঠ বিকল্প বাছাই করার জন্য বিকল্পসমূহ হতে প্রসূত নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট ফল লাভের পরিমাণ বুঝতে হবে।
এক্ষেত্রে কতকগুলো বিকল্পের মধ্য থেকে বাছাই করার জন্য কতিপয় মৌলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুযোগ ব্যবস্থাপকের জন্য উন্মুক্ত থাকা প্রয়োজন ।
৫. বিকল্প ব্যবস্থাসমূহের মূল্যায়ন : প্রশাসনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বিতীয় পর্যায়ে বিকল্প ব্যবস্থাসমূহের মূল্যায়ন করা আবশ্যক। এসব বিকল্পের সবকটিই প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বা কার্যকর নয়। তাই এ পর্যায়ে এমন একটি বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে হয়, যার মাধ্যমে সর্বাধিক সুফল লাভ করা যায়।
৬. সিদ্ধান্তসমূহের কার্যে রূপায়ণ : প্রশাসনিক প্রয়োজনে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক না কেন তাকে বাস্তবতার সাথে অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
অনেক সময় সর্বাধিক সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও তা কর্মচারীদের অসহযোগিতা বা বোধগম্যতার অভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
এসব অসুবিধা কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যবস্থাপককে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন সহজতর হয়।
৭. সিদ্ধান্তসমূহের পুনর্বিবেচনা : যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও অনেক সময় স্বাভাবিকভাবেই ব্যবস্থাপক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করে বসেন।
এমন কতিপয় ভুলভ্রান্তি সব সিদ্ধান্তকে বানচাল করে দিতে পারে বিধায় এসব অসুবিধা দূর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য একটি ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এর ফলে সহজেই সিদ্ধান্তকে রদবদল করে যথাযথভাবে কার্যোপযোগী করে তোলা যায়।
৮. উপাত্তসমূহের শ্রেণিবদ্ধকরণ : কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই কতকগুলো ঘটনা এবং উপাত্তের সন্নিবেশ করা আবশ্যক। কিন্তু এসব উপাত্তসমূহকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে চলবে না। এদের অবশ্যই শ্রেণিবদ্ধ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে ।
৯. সময়ের গুরুত্ব : সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কখন এটি গ্রহণ করা উচিত অথবা অনুচিত সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
চেস্টার আই, বানার্ড মত প্রকাশ করেছেন যে, “সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।
অপরিপূর্ণ বা অসময়োচিত সিদ্ধান্তের কারণে বিপর্যয় রোধ করার জন্য প্রত্যেক ব্যবস্থাপকের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। "
১০. সিদ্ধান্ত প্রণয়নের উপাদান : হার্বার্ট এ. সাইমন সিদ্ধান্ত প্রণয়ন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি উপাদানকে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন।
যথা : ক. পরিকল্পনা প্রণয়ন (Planning), খ, সংগঠিত করা (Organizing), গ. নেতৃত্ব প্রদান (Leading), ঘ. নিয়ন্ত্রণ করা (Controlling) এবং ৬. সমন্বয়সাধন (Coordinating) এছাড়াও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনটি উপাদান কাজ করে। যথা :
ক. নিশ্চয়তা : সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলাফল কী হবে তা পূর্ব থেকে ভেবে দেখা উচিত। এটি খুব কম সময়ই হতে পারে।
খ. ঝুঁকি : সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
গ. অনিশ্চয়তা : সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিকল্প উপায়সমূহ অজ্ঞাত থাকে বলে এক্ষেত্রে প্রচুর অনিশ্চয়তাও বিদ্যমান থাকে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেকোনো সংগঠনের জন্য অপরিহার্য এবং গুরুত্বপূর্ণ।
এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না।
উদ্ভূত পরিবেশ, পরিস্থিতি, অবস্থা, কাঠামো প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে।