শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রবর্তিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রবর্তিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর |
শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রবর্তিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রবর্তিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লেখ।
- অথবা, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রবর্তিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এ শাসনামলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বেশ উন্নতির দিকে ধাবিত হয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর সেপ্টেম্বর মাসে আট সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করেন।
এ কমিশনে এমপি ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সিনিয়র সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। শেখ হাসিনার শাসনামলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয় ।
● শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রবর্তিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা : শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত ‘স্থানীয় সরকার কমিশন' চার স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকারের রূপরেখা পেশ করেন। যেমন—
ক. গ্রাম পর্যায়ে গ্রাম পরিষদ;
খ. ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ;
গ. থানা/উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ;
ঘ. জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদ ।
নিম্নে স্থানীয় সরকারের উপরিউক্ত স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
ক. গ্রাম পরিষদ : শেখ হাসিনার শাসনামলে গৃহীত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রথম স্তর হলো গ্রাম পরিষদ। ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ সংশোধিত বিধান অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডে গ্রাম পরিষদ গঠিত হবে। ৯টি ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্যগণ গ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন।
গঠন : ৯ জন পুরুষ সদস্য ও ৩ জন মহিলা সদস্যের সমন্বয়ে গ্রাম পরিষদ গঠিত হবে। সাব-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, সমবায় প্রতিনিধি, একজন মুক্তিযোদ্ধা, আনসার ও ভি.ডি.পির একজন করে সদস্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে সদস্য হবেন।
কার্যাবলি :
১. জনমত গঠন এবং সন্ত্রাসবাদ, চুরি, ডাকাতি, নারী নির্যাতন ইত্যাদি ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা;
২. জন্মমৃত্যুর হিসাব সংরক্ষণ, বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণ;
৩. গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসা, মক্তব ইত্যাদি তদারকি করা;
৪. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ।
খ. ইউনিয়ন পরিষদ : ক্ষমতা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে 'স্থানীয় সরকার' ইউনিয়ন পরিষদ বিল পাস করে।
এ বিল অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের গঠন, কার্যাবলি এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ পেশ করেন সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
গঠন প্রণালি :
১. জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ১ জন চেয়ারম্যান।
২. ৯টি ওয়ার্ড থেকে ৯ জন সদস্য।
৩. প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে ৩টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য যারা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন।
ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলি : ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলিকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায় :
১. উন্নয়নমূলক কার্যাবলি : কৃষি ও কুটিরশিল্পের উন্নতি, বন, মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি এবং ইউনিয়নের সার্বিক কল্যাণে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।
২. রাজস্ব ও প্রশাসন : রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড ও তালিকা প্রণয়ন, ঋণ আদায় করা, রাজস্ব ও প্রশাসনিক বিষয়ে কর্মরত কর্মচারীদের সহায়তা প্রদান ।
৩. নিরাপত্তা চৌকিদার ও দফাদার : যারা গ্রামের নিরাপত্তা বিধান করা।
৪. নাগরিক কার্যাবলি : যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, পানীয় জল সরবরাহ এবং সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ ।
গ. উপজেলা পরিষদ : ১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের বিধান অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, দুজন ভাইস চেয়ারম্যান যার মধ্যে একজন মহিলা হবেন, উপজেলার এলাকাভুক্ত প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি, উপজেলার এলাকাভুক্ত প্রত্যেক পৌরসভা যদি থাকে এর মেয়র বা সাময়িকভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যগণ সমন্বয়ে উপজেলা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়।
মেয়াদ : উপজেলা পরিষদ আইনের ধারা ৫৩ এর বিধান সাপেক্ষে পরিষদের মেয়াদ হবে উহার প্রথম সভার তারিখ থেকে ৫ বছর।
তবে শর্ত থাকবে, উক্ত মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচিত নতুন পরিষদ উহার প্রথম সভা মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদ কার্য চালিয়ে যাবে।
কার্যাবলি : ১৯৯৮ সালের আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নিম্নরূপ কার্য সম্পাদন করে :
১. পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তুতকরণ।
২. উপজেলা পরিষদের হাতে হস্তান্তরিত বিভিন্ন সরকারি বিভাগসমূহের কার্যাবলি তদারকি ও সমন্বয়সাধন ।
৩. জনগণের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ।
৪. স্যানিটেশন, পয়ঃনিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।
৫. জনগণকে শিক্ষার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ করা এ ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদান ।
৬. বন, কৃষি, প্রাণিজ, মৎস্যসম্পদ উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইত্যাদি।
ঘ. জেলা পরিষদ : স্থানীয় সরকার কমিশন ঘোষণা করেন যে, জেলা পরিষদের পুনর্জাগরণ হচ্ছে স্থানীয় সরকারের একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানের পুনঃঅভিধান।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জেলা পরিষদের যিনি চেয়ারম্যান হবেন তিনি জেলায় বসবাসরত প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন।
পরিষদে এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। জেলার প্রতিটি থানা থেকে ২ জন সদস্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন।
জেলা পর্যায়ে কর্মরত NGO দের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা মন্ত্রী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে অভিহিত হবেন।
তার মর্যাদা হবে একজন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার অনুরূপ। সম্প্ৰতি শেখ হাসিনা সরকার পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে ২১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা পরিষদ গঠন করার বিল পাস করেছে।
কার্যাবলি : জেলা পরিষদের মূল কাজ হচ্ছে জেলার আওতাধীন সকল উপজেলার জন্য দক্ষতার সাথে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনার রূপরেখা প্রণয়ন করা ।
জেলা পরিষদ জেলার অধীন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে সমন্বয়সাধন করে । অন্যান্য কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে—
১. উপজেলার কার্যক্রম মনিটরিং করা।
২. জেলা পর্যায়ে কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম তদারকি ও মনিটরিং করা ।
৩. জেলা পর্যায়ে অবস্থিত হাসপাতল এবং ক্লিনিকগুলো তদারকি ও মনিটরিং করা ।
৪. ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণে সহযোগিতা করা ।
৫. আইনশৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নির্মূল করা ও পুলিশি কার্যক্রম তদারকি করা ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানে শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিকা অপরিসীম।
যেকোনো রাষ্ট্রের উন্নয়নের মূল ভিত্তি হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের সরকার। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠা হতে শুরু করে, স্থানীয় প্রশাসনের সফল বাস্তবায়ন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের শাসনকালে।
তৃণমূল পর্যায়ে জনকল্যাণ নিশ্চিতকরণে এ সরকার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা সংযোজন করে । যা বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশের পথকে সুদৃঢ় করেছে।