পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনা কর
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনা কর |
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বর্ণনা কর।
- অথবা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কী জান লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশে পার্বত্য এলাকার ভূমি যেমন সমতল ভূমি থেকে ভিন্ন প্রকৃতির, তেমনি এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীও ভিন্ন প্রকৃতির।
এসব উপজাতি সম্প্রদায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবনযাপন পদ্ধতি বাঙালিদের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে সমতল এলাকা থেকে ভিন্নতর বহুমুখী সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানের নিরিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ : 'পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ১৯৯৮' অনুসারে সরকার পরিষদের কার্যকলাপ ও পরিচালকদের ওপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবে।
সরকার যদি মনে করে যে, পরিষদ জনস্বার্থ ও আইনবিরোধী কাজ করছে তবে সরকার নিম্নলিখিত উপায়ে পরিষদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবে :
ক. পরিষদ কর্তৃক গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপ বাতিল ঘোষণা করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে তা বাতিল করতে পারবে।
খ. পরিষদ কর্তৃক গৃহীত জনস্বার্থবিরোধী ও আইনের পরিপন্থি যেকোনো রেজুলেশন স্থগিত করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ জনকল্যাণার্থে রেজুলেশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যাবলি সম্পাদন যদি জনস্বার্থবিরোধী ও দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হয় তাহলে সরকার তা বাতিল করতে পারে।
গ. জনস্বার্থবিরোধী ও আইনের পরিপন্থি যেকোনো প্রস্তাবিত কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ স্থানীয় উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।
কিন্তু এসব কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হলে সরকার সকল প্রকার প্রস্তাবিত কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
ঘ. পরিষদকে তার নিজস্ব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের আওতাধীন কার্যব্যবস্থা অনুসরণপূর্বক কর্মসম্পাদনের আদেশ প্রদান করতে পারবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ তার নিজস্ব ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বাইরে কোনো কাজ করলে সরকার তা বন্ধ করতে পারবে।
এ ধরনের যেকোনো আদেশ জারির ত্রিশ দিনের মধ্যে পরিষদ সরকারকে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত করবে। সরকার পরিষদের কাজের ব্যাপারে তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে।
তাছাড়া নিম্নলিখিত কারণেও সরকার চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদ বিলুপ্ত করে পরিষদের দায়িত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করতে পারে :
১. পরিষদ যদি অবৈধ কার্যকলাপের সাথে জড়িত হয়।
২. পরিষদের ওপর দায়িত্ব ও কর্তব্য যদি যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয় ।
৩. পরিষদ যদি কোনো জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত হয়।
৪. পরিষদ যদি তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদও স্থানীয় সরকার প্রশাসন, যা সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।
পরিষদকে কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হয় । তাছাড়া সরকার পরিষদের যেকেনো কাজের ওপর হস্তক্ষেপ কিংবা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা রাখে।