মুঘল আমলের স্থানীয় সরকারের বিবরণ দাও
মুঘল আমলের স্থানীয় সরকারের বিবরণ দাও |
মুঘল আমলের স্থানীয় সরকারের বিবরণ দাও
- অথবা, মুঘল আমলের স্থানীয় সরকারের বর্ণনা দাও।
- অথবা, মুঘল আমলের স্থানীয় সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : স্থানীয় সরকার নিম্নতম পর্যায়ের বা স্থানীয়ভাবে সংগঠিত সরকার ব্যবস্থা। বাংলায় সব যুগেই স্থানীয় সরকার ছিল। তবে বিভিন্ন যুগে এর ধরন ছিল ভিন্নতর।
গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানই স্থানীয় সরকার কাঠামো গড়ে তুলেছিল, আর এ প্রতিষ্ঠানের উপরই মূলত নির্ভরশীল ছিল প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার সরকার ব্যবস্থা।
মুঘল আমলে রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা অনেকটা সংগঠিত রূপ লাভ করে এবং শেষদিকে স্থানীয় প্রশাসন অধিকতর গতিশীল ছিল ।
● মুঘল আমলের স্থানীয় সরকার : মুঘল শাসনামলে গ্রাম প্রশাসন ছিল পঞ্চায়েতের হাতে। প্রতি গ্রামে পরিষদ বা পঞ্চায়েত ছিল। এ পরিষদই গ্রামপ্রধান নিয়োগ বা নির্বাচন করতো।
গ্রামপ্রধান গ্রাম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতেন । গ্রামপ্রধান কৃষকের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতেন। মুঘল শাসনামলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
তবে শেষদিকে স্থানীয় প্রশাসন অধিকতর গতিশীল ছিল। ফলে মুঘল শাসনামলে রাজস্ব ও সাধারণ প্রশাসনের মূল কেন্দ্রে আবির্ভূত হয় সরকার/চাকলা ও পরগনা।
মুঘল শাসনামলে বাংলায় শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় । স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় তাদের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল শহরাঞ্চলে।
এ যুগে নগর সংস্থার মূলভিত্তি হিসেবে কোতোয়ালের কার্যালয় স্থাপিত হয়। সম্রাটের সনদের মাধ্যমে কোতোয়াল নিয়োগ লাভ করতেন। তিনি ছিলেন উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা ছিল তার প্রধান দায়িত্ব। তিনি নগর রক্ষীবাহিনী, গুপ্তচর বাহিনী এবং একপাল ঘোড়া পোষণ করতেন । নগর জীবনের প্রায় সবকিছুই ছিল তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
মূলত মুঘলরা ভিনদেশি এবং শাসনব্যবস্থা শহরকেন্দ্রিক হওয়ার ফলে মুঘল আমলে স্থানীয় সরকারের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে মুঘল শাসনামলে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে শাসনব্যবস্থাকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল । যথা :
এলাকা
১. সুবা
পদবি সুবেদার/নাজিম
২. সরকার
ফৌজদার
৩. পরগনা
শিকদার
৪. থানা
৫. মহল্লা
চৌকিদার মল্লিক ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘলরা ভিনদেশি এবং ভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনুসারী হলেও তারা সুপ্রাচীন গ্রামীণ পঞ্চায়েত ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখেন ।
মূলত মুঘল শাসকেরা একটি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল, যার অন্যতম স্তম্ভ ছিল পরগনা ব্যবস্থা।
এছাড়া মুঘল শাসনামলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় শহরের গুরুত্ব ছিল অনেক। এ যুগেই নগর সংস্থার মূল ভিত্তি হিসেবে কোতোয়ালের কার্যালয় স্থাপিত হয় ।