ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর
ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর |
ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা কর
- অথবা, ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যা জান লেখ।
- অথবা, ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার কাঠামোর নিচের দিকে সবচেয়ে কার্যকর ইউনিট হলো ইউনিয়ন পরিষদ । ইউনিয়ন পরিষদ চালনার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে অর্থ।
ইউনিয়ন পরিষদের অর্থব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদের আয়, ব্যয়, দায়মুক্তি, বাজেট, হিসাব ও নিরীক্ষা করার সাথে সম্পৃক্ত। সঠিকভাবে অর্থব্যবস্থা সম্পন্ন করতে পারলে ইউনিয়ন পরিষদ সফলতার মুখ দেখতে পাবে।
→ ইউনিয়ন পরিষদের অর্থব্যবস্থাপনা : নিম্নে ইউনিয়ন পরিষদ অধ্যাদেশ- ২০০৯ সাল অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. পরিষদের সম্পত্তি অর্জন, দখলে রাখার ও নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা : প্রত্যেক পরিষদের সম্পত্তি অর্জনের, দখলে রাখার ও নিষ্পত্তি করার এবং চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা থাকবে; তবে, স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে পরিষদকে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
দান, বিক্রয়, বন্ধক, ইজারা, বিনিময়ের মাধ্যমে যেকোনো সম্পত্তি বিধি অনুযায়ী অর্জন বা হস্তান্তর করতে পারবে।
২. পরিষদে সম্পদ হস্তান্তর : সরকার, কোনো পরিষদ বা এর স্থানীয় অধিক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত কোনো সরকারি সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট আইন বা বিধিবিধান অনুযায়ী উক্ত পরিষদকে হস্তান্তর করে দিতে পারবে এবং উক্তরূপ সম্পত্তি ঐ পরিষদে বর্তাবে ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে।
৩. আয়ের উৎস : ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের উৎস বাড়িঘর, দালানকোঠার ওপর কর; জন্ম, বিবাহ ও ভোজের ওপর ফি; জনস্বার্থে বিশেষ কল্যাণকর কাজের জন্য ফি; হাটবাজার, জলমহাল, ফেরিঘাট ইজারা ও টোল সংগ্রহ; সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রা, সার্কাস, মেলা ইত্যাদির উপর কর, যানবাহনের ওপর কর, লাইসেন্স, পারমিট ফি; সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বরাদ্দ/অনুদান ইত্যাদি ।
৪. পরিষদের ব্যয় : তহবিলের অর্থ নিম্নলিখিত খাতসমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যয় করতে হবে, যথা : পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা প্রদান; তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয়; পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদন ও কর্তব্য পালনের জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনক্রমে পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত তহবিলের ওপর পায়যুক্ত ব্যয়। বায়;
৫. পরিষদের তহবিল সংরক্ষণ এবং বিশেষ তহবিল গঠন : পরিষদের তহবিলে জমাকৃত অর্থ কোনো সরকারি ট্রেজারিতে বা সরকারি ট্রেজারির কার্য পরিচালনাকারী কোনো ব্যাংকে বা সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রাখতে হবে। পরিষদ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিষদের তহবিলের যেকোনো অংশ বিনিয়োগ করতে পারবে।
৬. কমিশনের অর্থবিষয়ক সুপারিশ বাস্তবায়ন : নিম্নবর্ণিত বিষয়ে কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশ বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, যথা : সরকারের বিভিন্ন উৎস হতে প্রদত্ত কর বা ফি ইত্যাদি প্রদানের হার বৃদ্ধি; সরকারি কোষাগার হতে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান; পরিষদের আয়ের উৎস ও পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত ব্যবস্থা।
৭. বাজেট প্রণয়ন : ইউনিয়ন পরিষদ বাজেট প্রণয়নসংক্রান্ত নিম্নলিখিত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে :
ক. প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ প্রতি অর্থবছর শুরু হওয়ার অন্যূন ৬০ (ষাট) দিন পূর্বে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ওয়ার্ড সভা হতে প্রাপ্ত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উক্ত অর্থ বৎসরের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয় বিবরণী সম্বলিত একটি বাজেট প্রণয়ন করবে।
খ. ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি এবং স্থানীয় জনসাধারণের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য বাজেট অধিবেশন অনুষ্ঠান করে বাজেট পেশ করবে এবং পরিষদের পরবর্তী সভায় পাসকৃত বাজেটের অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রেরণ করবে।
গ. কোনো ইউনিয়ন পরিষদ অর্থবছর শুরু হওয়ার পূর্বে উক্ত বাজেট প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সম্ভাব্য আয়ব্যয়ের একটি বিবরণী প্রস্তুত ও প্রত্যয়ন করবে এবং এরূপ প্রত্যয়নকৃত বিবরণী ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদিত বাজেট বলে গণ্য হবে ।
ঘ. বাজেটের অনুলিপি প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে বাজেটে কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে পরিষদকে অবহিত করবে এবং অনুরূপভাবে প্রণীত বাজেট ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট বলে গণ্য হবে।
ঙ. কোনো অর্থবছর শেষ হওয়ার পূর্বে যেকোনো সময় উক্ত বৎসরের জন্য প্রয়োজন হলে ইউনিয়ন পরিষদ সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করে তার অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রেরণ করবে।
চ. ইউনিয়ন পরিষদ দায়িত্বভার গ্রহণের পর অর্থ বৎসরের অবশিষ্ট সময়ের জন্য বাজেট প্রণয়ন করতে পারবে।
৮. হিসাব : ইউনিয়ন পরিষদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফরমে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রত্যেক অর্থ বৎসরের শেষে ইউনিয়ন পরিষদ উক্ত অর্থ বৎসরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুত করবে এবং ইউনিয়ন পরিষদের সকল স্থায়ী কমিটি ও জনসাধারণের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনে এ হিসাব পেশ করবে।
৯. নিরীক্ষাসংক্রান্ত বিধি প্রণয়ন : সরকার, কমিশনের সাথে পরামর্শক্রমে, নিরীক্ষাসংক্রান্ত বিধি প্রণয়ন করবে, যাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যথা : নিরীক্ষা প্রতিবেদন সংক্রান্ত সময়সীমা; হিসাবপত্রের গুরুত্বপূর্ণ অসংগতি বা অনিয়ম; অর্থ বা সম্পত্তির কোনোরূপ ক্ষতি বা অপচয়; নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ব্যবস্থা গ্রহণের সময়সীমাসহ অন্যান্য করণীয় বিষয়াবলি; অবৈধভাবে অর্থ প্রদানকারী বা অর্থ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট সুপারিশ; হিসাবপত্রের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা; হিসাবপত্রের বিশেষ নিরীক্ষা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
একটি রাষ্ট্রপরিচালনা করতে হলে অর্থব্যবস্থার যেসব নিয়মকানুন রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য প্রায় একই রকম নিয়ম চালু করা হয়েছে।
তবে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ ব্যবস্থাপনাকে অনেকাংশে কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ নির্দেশ ও সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হয়।