মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ
মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে - নমস্কার বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের আপনাদের সাথে আলোচনা করবো মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মুজিবনগর সরকার। তাহলে শিক্ষার্থী বন্ধুরা শুরু করা যাক আজকের টপিক।
মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ?
ভূমিকা: ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ থেকে সারা বাংলায় বর্বর পাক-হানাদার বাহিনীর
বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম চলছিল। এই প্রতিরোধ সংগ্রামকে চূড়ান্ত রুপ দেবার
প্রয়াসে একটি সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। আর এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই সৃষ্টি
হয় মুজিবনগর সরকার।
মুজিবনগর সরকার
বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি স্তম্ভ। মোটকথা, সুদূরপ্রসারী
পরিকল্পনা এবং পাকবাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে মুক্ত হবার দুঃসাহসিক ও
দুর্দান্ত প্রচেষ্টার ফসল হলো মুজিবনগর সরকার।
আমারলোড ব্লগের আপডেট পেতে 👉🔯Google News👈 Follow করুন
মুজিবনগর সরকার: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল মুজিবনগর সরকার। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক
পরিষদ অধিকাংশ নির্বাচিত সদস্যদের উদ্যেগে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের আগরতলায়
বাংলাদেশে
সরকারের প্রথম মন্ত্রীসভা গঠিত হয়, যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত।
এই সরকার প্রবাসী সরকার নামেও পরিচিত ছিল। ১১ এপ্রিল ১৯৭১ সাল তাজউদ্দিন আহমদ
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার কথা ঘোষনা করেন।
নিচে মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ও তাঁদের দপ্তরের নাম উল্লেখ করা হলো-
মুজিবনগর সরকার
দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর | দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি |
---|---|
রাষ্ট্রপতি | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান |
উপরাষ্ট্রপতি/অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি | সৈয়ত নজরুল ইসলাম |
প্রধানমন্ত্রী | তাজউদ্দিন আহমদ |
পররাষ্ট্র দপ্তর | খন্দকার মোস্তাক আহমদ |
স্বরাষ্ট্র দপ্তর | এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান |
অর্থ দপ্তর | ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী |
মুজিবনগর সরকার গঠন করার পর বাংলাদেশের নামকরণ করা হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
সরকার’, যা একটি স্মরণীয় ঘটনা। ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হলেও
এ সরকার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ১৭ এপ্রিল।
শপথ অনুষ্ঠানের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয় কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার
ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননকে। পরবর্তীতে বৈদ্যনাথতলার নামকরণ করা হয়
মুজিবনগর। নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় তরুণ সিভিল অফিসার তওফিক ইলাহী চৌধুরীর
নেতৃত্বে কতিপয় মুক্তিযোদ্ধাকে।
অভিষেক অনুষ্ঠানে শপথ গ্রহনের অনুষ্ঠান শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ১১টা
১০মিনিটে। এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, আমন্ত্রিত
অতিথিবৃন্দ, শতাধিক ভারতীয় এবং বিদেশী সাংবাদিক ও প্রচারকর্মী, স্থানীয় অধিবাসী
এবং কিছু মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের পরিচালনা করেন আব্দুল মান্নান। তরুণ পুলিশ
অফিসার মাহবুব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রাথমিকভাবে ‘মুক্তিফৌজ’ হিসেবে পরিচিত
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল মন্ত্রীসভার মঞ্চে গার্ড অব অনার কুচকাওয়াজে অংশ
নেন। এরপর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও প্রধান সেনাপতি এম এজি ওসমানী একটি ছোট মঞ্চে
আসন গ্রহণ করেন।
মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা করা হয়। নতুন রাষ্ট্রের এ
ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
স্বাধীনতার সনদ ঘোষণার পর একে একে মন্ত্রিসভার সকল সদস্য শপথ বাক্য পাঠ
করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল
অনন্য। এ সরকারকে মুক্তিযুদ্ধে সফলতার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয়েছে
সতর্কভাবে। নানামুখী চাপ ও ঝামেলার মাঝেও মুজিবনগর সরকার কাজ করে গেছেন বিরামহীন।
যার ফলশ্রুতিতে এ সরকার উপহার দিতে পেরেছে লাল-সবুজের গর্বিত পতাকা।
শেষকথা
মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনে নিলাম। আশা করি আজকের
আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি আর্টিকেলটি আপনাদের কোথাও ভালো লেগে থাকে
তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এ রকম আরও আর্টিকেল পেতে চাইলে আমারলোড ওয়েবসাইটের
সাথে থাকুন।