ডেঙ্গুর লক্ষণ: ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ এবং কিভাবে নিরাময় করা যায়?
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ এবং কিভাবে নিরাময় করা যায় - ডেঙ্গুজ্বর হল এডিস মশার দ্বারা ছড়ানো একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। আর এই ভাইরাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী এবং ফুসকুনি হয়ে থাকে। যা ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। তাই এই ব্লগে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ এবং চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করি খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদে ভালো আছি। আজকের নতুন টপিকে আপনাকে স্বাগতম!
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ এবং কিভাবে নিরাময় করা যায়
ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক ফ্লুর মতো একটি রোগ, যা খুবই প্রাণঘাতী হতে পারে। এটি একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়ে থাকে, যা এডিস ইজিপ্টি নামে পরিচিত। একটি সংক্রামিত এডিস মশাকী (স্ত্রী মশা) কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। আর এই এডিস মশাকী হল ভাইরাসের প্রধান বহক।
প্রতি বছর সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন লোককে প্রভাবিত করে। এদের মধ্যে প্রায় ১২৫০০-২৫০০০ জন মারা যায়। ডেঙ্গুর এই ঘটনা দিন দিন বাড়তেই থাকছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলিতে ডেঙ্গু পাওয়া যায়। তবে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে শহরগুলিতে ডেঙ্গু জ্বরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি?
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পিছনে প্রচণ্ড ব্যথা, পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং ফুসকুড়ি। আপনার যদি ডেঙ্গু জ্বর থাকে তবে আপনার এই লক্ষণগুলি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?
তবে শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণের যেমন- পাতলা পায়খানা, বমি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। যা শিশুদের জন্য খুবই জটিল বিষয়।
গুরুতর জয়েন্ট এবং পেশী ব্যথার কারণে ডেঙ্গু জ্বরকে ব্রেকবোন ফিভারও বলা হয়। ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) এর মতো নয়, যা এই রোগের আরও মারাত্মক রূপ।
যদি ডেঙ্গু ধরা পড়ে তাহলে কি করবেন?
যদি আপনার ডেঙ্গু ধরা পড়ে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তার বা চিকিৎকের পরামর্শ নিতে হবে। আর জ্বর হলে অবশ্যই আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পরিমানে তরল খাবার খেতে হবে বিশেষ করে ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন, লেবুর শরবত, স্যুপ এই ধরনের খবার অনেক বেশি পরিমানে খেতে হবে।
এক্ষেত্রে শিশুকেউ মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে তরল খাবার দিতে হবে।
চিকিৎসকেরা ডেঙ্গুর ধরণ বুঝে প্যারাসিটামল দিয়ে থাকে। চিকিৎসকেরা বলছেন প্যারাসিটামলের সর্বচ্ছো ডোজ হচ্ছে ৪ গ্রাম পর্যন্ত কিন্তু কোন রোগীর যদি কিডনি, হার্ট, লিভারে কোনো সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে প্যারাসিটামল গ্রহণ করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
যদি আপনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করা যাবে না। কারণ এই ঔষধ সেবন করলে ডেঙ্গু জ্বরের জন্য মারাত্নক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এক্ষেত্রে আপনাকে প্রচুর বিশ্রাম ও চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে।
ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?
আপনার ডেঙ্গু হলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে তা কিন্তু নয়। তবে রোগীর জ্বর কমে গেলেউ তার মধ্যে অন্য কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে। যেমন:- বমি হওয়া, পেটে ব্যথা।
বিশেষ করে ২ থেকে ৩ দিন শিশুকে সর্বক্ষণিক নজর দাড়িতে রাখা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ডেঙ্গুজ্বরের দুইদিন পরে রোগীর শরীর অনেক ঠান্ডা হয়ে যাই। সেক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় ভালো।
আরও পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপায় - ছেলে মেয়ে উভয়েরই
চিকিৎসকেরা ডেঙ্গুজ্বরের তিনটি ভাগ করেছেন আর তা হল ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ প্রথম ক্যাটাগরির অর্থাৎ ‘এ’ ক্যাটাগরির রোগীদের তাদের শুধুমাত্র জ্বর হয়। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবাই স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু শরীরের কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন:- বমি, পেটে ব্যথা অনেক সময় দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের যে তিনটি ভাগ করেছেন চিকিৎসকেরা সেক্ষেত্রে ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গুজ্বর সব থেকে মারাত্নক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে তখন আইসিইউতে প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে চিকিৎসকই চূাড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর সেরে গেলেও কী করা উচিত?
জ্বর সেরে গেলেও কিছু পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। চিকিৎসকের বলছেন অনেক সময় চার, পাঁচদিন চলে গেলেও ডেঙ্গু রোগীরা পুরোপুরি সেরে উঠে না। সে কারণে তারা পরামর্শ দেন যে সর্বনিম্ন ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে।
এই সময়ে তাদের কোন প্রকার ভারী কাজ করা যাবে না। আপনাদের অনেকে মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে ডেঙ্গু একবার হলে কি আরেক বার হতে পারে? এক্ষেত্রে বলবো ডেঙ্গু একাধিকবারও হতে পারে। যদি আপনি ডেঙ্গু থেকে একবার সেরে উঠলে পরবর্তীতে যদি আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তাহলে সেটা আরও মারাত্নক হতে পারে।
তাই চিকিৎসকেরা অনেক বেশি সতর্ক থাকার কথা বলে। আর চিকিৎসকের পরামর্শে চললে ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করণীয়
সাধারণত এডিস মশা দিনের বেলা বেশি কামড়ায়। যার ফলে দিনের বেলাই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই আমাদের সকলে মিলে ডেঙ্গুকে প্রতিহত করতে হবে। আর ডেঙ্গু মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায় হল মশার প্রজনন স্থল থেকে পরিত্রাণ পাওয়া।
সাধারণত জমে থাকা পানিতে এডিস মশা হয়ে থাকে। তাই কোন অবস্থাতেই পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে সবাই খেয়াল রাখতে হবে। এডিস মশার বংশ বিস্তারের স্থান হল জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও পরিষ্কার পানি। এতে করে এডিস মশা জন্মাতে পারবে না।
জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাইড়ে বেড়োনোর আগে ফুলহাতা জামা এবং ফুলপ্যান্ট পড়ুন, পা ঢেকে জুতা পড়ুন।
এছাড়াও দিনে এবং রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমান। যদি আপনার বাড়ির সাথে ছাদ অথবা বাগান থাকলে বেশি সতর্ক থাকুন।
আপনার বাড়ির আশেপাশে পুকুর অথবা ডোবা থাকলে বাড়তি সতর্ক থাকুন। এবং বাড়ির আশে পাশে যদি কোন পানি জমে থাকে তবে তা ফেলে দিন।
সর্বশেষে মনে রাখলাম, ডেঙ্গুর কোনো ভ্যাকসিন অথবা বিশেষ কোন ওষুধ নেই।
সর্বশেষ কিছু কথা ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ এবং কিভাবে নিরাময় করা যায়
আপনারা আজকে এই ব্লগের মাধ্যমে জানতে পারলেন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা এবং ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ এবং কিভাবে নিরাময় করা যায় ইত্যাদি সম্পর্কে আজকে ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
যদি আপনাদের এই ব্লগটি কাজে লেগে থাকে এবং একটুও উপারে আশে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমাদের এই ওয়েবসাইটে শিক্ষামূলক, এডুকেশন ও তথ্যমূলক ব্লগ প্রচার করা হয়ে থাকে। ধন্যবাদ আমারলোড এর সাথে থাকার জন্য।