হীরা কেন এত দামী বস্তু?
হীরা সম্পের্কে বিভিন্ন তথ্য - হীরা কেন এত দামী
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন হীরাকে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু বলে গণ্য করা হয়। এই কারনে সবার মনে একটা প্রশ্ন জাগে, হীরা কেন এত দামী? এবং কিভাবে মানুষের কাছে এটি দামী বস্তুতে পরিণত হল। মাত্র দুই শতাব্দী আগেও মানুষ হীরা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতো না। তখন এই হীরা নামের বস্তুটি দুর্লভ ছিল।
সাধারণত রাজ পরিবারের সদস্যরাই অলংকার হিসেবে এই বস্তু পড়তেন এবং তারাই এই মূল্যবান হীরার মালিক হতেন। ১৯৭০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিপুল পরিমাণ হীরার সন্ধান পান খনিক শ্রমিকরা জমে ওঠে হীরার বাজার। হীরা শুধু ধারক এবং বস্তু হয়ে ওঠে এমনটি নয়। তখন তুলনামূলকভাবে অনেক সস্তা হয়ে ওঠে এই হীরা।
কিন্তু এ অবস্থা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সেসিল রোডস নামের এক ব্যক্তি হীরার খনির শেয়ার কিনতে থাকে। “ডি বিয়ারস” এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠাতা হল সেসিল রোডস। তিনি হীরা সরবরাহের পুরোটাই তার আয়ত্বে নিয়ে নেন। তারপর থেকে হীরার উৎপাদন স্থীতিশীল হয়। হঠাৎ করে মার্কিন নাগরিকদের হীরার প্রতি আগ্রহ কমতে শুরু করে। শুরু হয় বাজারের মন্দা অবস্থা।
এক সমীক্ষায় দেখা যায় ১৯৩৯ সালে এক-তৃতীয়াংশই কোনো ধরনের আংটিবদল ছাড়াই কনেদের বিয়ে সম্পন্ন করতেন। এতে করে ডি বিয়ারস সমস্যায় পড়ে গেলেন, কারণ প্রয়োজনের অধিক জোগান থাকা সত্ত্বেও চাহিদা কম ছিল।
তখন ওই প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনী সংস্থা (এন ডব্লিউ আয়ার বরাবর) চিঠি পাঠাল। তিনি জানতে চাইলো প্রচারণা করে হীরার বিক্রয় বাড়নো সম্ভব কি না। জরিপ চালিয়ে দেখা গেলো অধিকাংশ মানুষই হীরাকে হাস্যকর বিলাসিতা ভাবে দেখে।
এরপর ডি বিয়ারস তারকাদের এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে হীরা ধার হিসেবে দিতে শুরু করে। লিপিকার ফ্রান্সেস গেরেটি ১৯৪৮ সালে হীরাকে ব্যাখা করে লিখেন “অনন্তকালের জন্য হীরা” তবে তার এই ব্যাখাটি ছিল মাত্র চার লাইনে। এই চার লাইনের ব্যাখায় যেমন ছিল স্বর্গীয় ভালোবাসার রূপক তেমনি ছিলো নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ।
তাতেই বাজিমাত। এরপর থেকে হীরার দাম ক্রমশই বাড়তে থাকে।
হীরার মূল্যমান নিরূপণ
চারটি বিষয়ের উপর হীরার মূল্য কেমন হবে তা নির্ভর করে থাকে। সেগুলো হল: কিভাবে কাটা হয়েছে, কতটা স্বচ্ছ, রং কিরুপ এবং কত ওজনের ক্যারেট। স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার একক ক্যারেট। ক্যারেট ব্যবহৃত হয় যে কোন স্বর্ণের ২৪ ভাগের কত ভাগ স্বর্ণ তা বোঝাতে। এক্ষেত্রে ২৪ ক্যারেট বলতে বোঝায় ২৪ ভাগের ২৪ ভাগই স্বর্ণ।
অন্যদিকে, রত্নপাথরের ক্ষেত্রে ক্যারেট হচ্ছে ভরের একক। ১ ক্যারেট = ০.২ গ্রাম বা ২০০ মিলিগ্রাম।
আসল হীরা চিনবার উপায়
বর্তমানে বিয়ে ও বাগদানে সোনার আংটি প্রচলণ থাকলেও এখন হীরার আংটি বা গহনার চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তাই এই হীরার গহনা বানাতে গিয়ে অনেকে প্রতারিত হচ্ছে তারা বুঝতে পাড়ে না তাকে আসল হীরা দেওয়া হচ্ছে নাকি নকল হীরা।
তাই আপনাদের নিচে কয়েকটি স্টেপ এর মধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
আসল হীরা কিভাবে চিনবেন জেনে নিন
১। ১ ক্যারেট হীরা সমান ০.২ গ্রাম। এই হিসাব মাথায় রেখেই বিবেচনা করা হয় হীরার ক্যারেট। সাধারণত আকারের উপর নির্ভর করে হীরার দাম নির্ধারণ করা হয়।
২। আসল হীরা কোন কিছু দিয়ে ঘষে দাগ ফেলানো যায় না। কিন্তু কৃত্রিম বা নকল হীরা শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘসলে তাতে দাগ পড়বে।
৩। আসল হীরাতে আলো ফেললে তাতে ধূসর ও ছাই রঙের আলোকচ্ছটা দেখা যাবে।
৪। হীরার প্রাকৃতিকভাবে কতটুকু খুঁত থাকে তা বুঝতে আকার এবং আকৃতির ওপর ১০ পাওয়ারের অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে হীরা নির্ণয় করা যায়।
৫। আপনি যদি হীরা কিনতে চান পেশাদার গেমোলজিস্ট রয়েছেন যারা হীরা পরীক্ষা করে দেয়। আপনি চায়লে তাদের থেকে পরীক্ষা করে আসল হীরা কিনতে পারেন।
সর্বশেষ কিছু কথা
বন্ধুরা তাহলে আমরা জানলাম (হীরা কেন এত দামী বস্তু?) পাশাপাশি আরও হীরা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জেনেছি। বন্ধুরা কোথাও যদি বুঝতে না পাড়েন তাহলে কমেন্ট করুন। আশা করি, উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। বন্ধুরা এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ Amarload.com এর সাথে থাকার জন্য।